আজ, শনিবার | ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | দুপুর ১২:১৪

ব্রেকিং নিউজ :
বৃষ্টির প্রার্থনায় নামাজ পড়ে কাঁদলেন শ্রীপুরের মুসল্লিরা মহম্মদপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় শিক্ষকের মৃত্যু মাগুরায় প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ মাগুরায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাহিদুর রেজা চন্দন ও নবীব আলী মহম্মদপুরে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন শালিখায় ৫ জনের মনোনয়ন পত্র জমা স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান মাগুরা সদরে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ৭ শ্রীপুরে ৪ প্রার্থীর মনোনয়ন জমা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিক কাজী ফয়জুর রহমানের ইন্তেকাল মাগুরার শ্রীপুরে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা!

গানের ভুবনে স্মৃতির মাধুর্য

অনন্যা হক :: সূর্যের অফুরান বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মি প্রকৃতিকে কানায় কানায় পূর্ণ করে দিচ্ছে। শীতের হালকা আমেজ, ঘুমের আমেজটাকে একটু আদুরে করে দেয়। ঘুম ভেঙেও তাই রেশটা রয়ে যায় আরো কিছু সময়। সেই রেশের ভেতরে ঢুকে পড়ে অজস্র স্মৃতি। আজ সকালটা ঠিক এমন করে ধরা দিলো।

সেই হারানো দিন, পুরোনো বেলা, যা আর কখনও আসবে না ফিরে। কিন্তু মনের মাঝে ঢেউ এর তরঙ্গের দোলার মতো যখন তখন দুলে ওঠে হারানো সময়ের ভেতরে ডুবে যাওয়া হারানো দিনলিপি, ভেসে আসে হারানো সুর,হারানো সে গান। হঠাত্ করে কিছুটা বিষন্নতার ঘোরে একটা গানের কলি একাই গুনগুনিয়ে উঠলো মনে-
‘গীতিময় সেই দিন চিরদিন বুঝি আর রোলো না,
মরমে রাঙা পাখি উড়ে সে গেল নাকি,
সে কথা জানা হলো না।’

শীতের সকাল, কুয়াশার চাদরে মোড়ানো ভোর চোখের পর্দায়। প্রথমেই ভেসে ওঠে নিজের শহরের প্রকৃতি আর সেখানে বেড়ে ওঠা,আর বেড়ে ওঠার সাথের সেই জীবনাচরণ। জীবনের সাথে, মনের খোরাক হয়ে পলে পলে মিশে ছিল গান। বিশেষ করে আমাদের বাংলা সিনেমার গানগুলো। সহজ-সরল ভাষায় দারুণ আবেগময় সেই গানগুলি হারিয়ে যাবার নয় মন থেকে। দীর্ঘ সময় ধরে কত না গান শুনেছি রেডিওতে, আর সরাসরি সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা থেকেও।

রেডিওতে হতো ছায়াছবির গানের অনুষ্ঠান ‘দুর্বার’। সন্ধ্যার আয়োজনে এই অনুষ্ঠান তখনকার সময়ে খুব জনপ্রিয়। পড়তে বসার সময়, তবুও যেন লুকিয়ে চুরিয়ে শুনতেই হবে অনুষ্ঠানটা। মনে পড়ে রেডিও নিয়ে টানাটানি পড়ে যেতো। কার কাছে থাকবে রেডিওটা। এরপর এক সাথে এক ঘরে রেডিওর কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়ার মতো জড় হয়ে গান শোনা। একটা ঝংকার দেয়া মিউজিক দিয়ে শুরু হতো দুর্বার। এটা ছিল অনুরোধের আসর। বেশ কয়েকটা গানের পর শেষ হতো অনুষ্ঠানটা।

সব সংসারে একটাই রেডিও। তখন এমনই জীবন, সব কিছুতে একটা সীমাবদ্ধতা, একটা মাত্রা জ্ঞানের তাগিদ থাকতো মনে মনে। এখনকার মতো এমন নয়, যে হাতে হাতে মোবাইল, পৃথিবীর সব কিছুর অনুসন্ধান মোবাইলের ভেতরেই পেয়ে যাবো। তাই সবেতে আগ্রহের কোন সীমা নেই ,আকর্ষণের কোন ঘাটতি নেই। অভিভাবকদের কোন পাহারা বা তদারকি দমাতে পারেনি কখনও। এর ফাঁকফোকর দিয়ে সবাই চেষ্টা করেছে যে যেভাবে পারে জীবনকে উপভোগ করতে।

মানুষ জন্মগতভাবে আনন্দ প্রিয়, বিনোদন প্রিয়,তাই বিভিন্ন কৌশলে আয়ত্ত করতে চায় জীবনের রুপ রস সৌন্দর্য। তেমনি লুকিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে এ সব সিনেমা আমরা দেখেছি।যার অজস্র গান এখনো গুনগুনিয়ে ওঠে মনের পর্দায়। নায়ক নায়িকাদের সে সব মিষ্টি প্রেম, যার পায়ে পায়ে ছিল বাধা। অনেক ঘটনার পর, বাধা বিপত্তির পর একটা প্রেম পরিণয় পর্যন্ত যেতো। পারিবারিক বাধা, ভিলেনের অনেক রকম ছলচাতুরীর গন্ডি পার হয়ে তবেই না নায়ক নায়িকাদের প্রেম সফলতা পেতো।

কোন কোন সিনেমা হতো হয়তো বিয়োগাত্মক, তবে সে সংখ্যাটা তুলনামূলক কম ছিল। আমাদের আবেগি কচি মন তখন একটা উত্কন্ঠা নিয়ে অনেক ঝড়ঝাপটার পর অবশেষে নায়ক নায়িকার মিলনাত্মক ঘটনা দেখতে ব্যাকুল হয়ে থাকতো। তাদের দুঃখ কষ্টে দর্শকেরাও ভীষণ কাতর হতো। এমনকি সিনেমা দেখতে দেখতে অঝোরে কান্না এক স্বাভাবিক ঘটনা ছিল অনেকের জীবনে। আর তাদের সুখের মিলন হলে আমরা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হল থেকে বের হয়ে আসতাম। এ সব সিনেমার ঘটনার ফাঁকে ফাঁকে থাকতো কিছু সময় পর পর ঘটনাপ্রবাহ অনুযায়ী কিছু গান। সিনেমার ঘটনা ভুলে গেলেও গানগুলো আমাদের মনে কেমন করে দাগ কেটে আছে সেটা বোঝা যায় পুরোটা নাহলেও কিছু গানের কলি,সুর যখন হঠাত্ করে ঠিক মনে ফিরে আসে। এক মধুরতায় মন ভরে ওঠে,মনে এসে যায় সে বয়স কাল সময়ের অনেক ছবি একসাথে। দেখেছি আমার সমসাময়িক অনেক মানুষের ভেতরে এ গুলো কেমন আলোড়ন তোলে আজও। ফিরে যাই যেন মনে করতে গিয়ে, গাইতে গিয়ে, শুনতে গিয়ে অনেক প্রিয় সোনালী সে সব দিনে। গানের কলি,আর সুরের সাথে মিষ্টি প্রেমের সে দৃশ্যগুলি,তেমনই কাঁচা অবুঝ আবেগে মন প্রফুল্ল হয়,আবার দুঃখ, বিরহের গানগুলোও তেমন আবেশে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তখন মনে হয় কিছুই একেবারে হারিয়ে যাবার নয়।

অনেক অনেক গানের ভেতরে কিছু গানের প্রথম কলি যেমন-
‘ও দরিয়ার পানি, তোর মতলব জানি’-সিনেমা তুফান,
‘সে যে কেন এলে না,কিছু ভালো লাগে না’- সিনেমা রংবাজ,
‘অশ্রু দিয়ে লেখা এই গান’-সিনেমা অশ্রু দিয়ে লেখা
সন্ধ্যারও ছায়া নামে এলোমেলো হাওয়া’-সিনেমা পুত্রবধূ,
‘তুমি সাত সাগরের ওপার হতে’ সিনেমা-কত যে মিনতি,
‘আমি নিজের মনে নিজেই যেন গোপনে ধরা পড়েছি’ আবির্ভাব,
‘চুমকি চলেছে একা পথে,-সিনেমা দোস্ত দুশমন,
‘চোখ যে মনের কথা বলে’-সিনেমা যে আগুনে পুড়ি,
‘গীতিময় এই দিন চিরদিন বুঝি আর রোলো না’-সিনেমা ছন্দ হারিয়ে গেল,
‘এই পৃথিবীর পরে কত ফুল ফোটে আর ঝরে’-সিনেমা মায়ার বাঁধন,
‘কথা বলো আর না বলো ও গো বন্ধু’- সিনেমা মধু মিলন,
‘ও রে নীল দরিয়া আমায় দে রে দে ছাড়িয়া’-সিনেমা সারেং বউ।
এমন হাজারো গান আছে,যা লিখে শেষ করা যাবে না। কিন্ত হঠাত্ করে গুনগুনিয়ে ওঠে মনের ভেতর। মানুষ কখনও তার অতীত ভুলতে পারে না।কারণ অতীতের কাছে জমা রেখে আমরা হেঁটে চলে আসি আমাদের জীবনের এমন অসংখ্য অনুষঙ্গ, সময়ের আলাপন।

এই পুরোনো দিনের বাংলা সিনেমার গানগুলিও তেমন স্মৃতিকাতর করে দিতে পারে সময় সময়ে। তাই রেডিওতে শোনার সেই দিন, সিনেমায় গিয়ে সিনেমা দেখার সেই দিন এক ছায়াঘন মায়াবী ছবির মতো ফুটে ওঠে এই গানের কলি আর সুরের সাথে। মন আবেশিত হয়, মনে হয় ফিরে যাই নিজ শহরের অন্তরঙ্গ সেই মুহূর্তের ভেতরে। নিজের বাড়িতে ঘরে বসে রেডিওতে মনোযোগ দিয়ে কানে পেতে গান শোনা,আর বহু আয়োজন করে কখনও লুকিয়ে অথবা বড়দের সাথে হলে গিয়ে দেখা সে সব গান যেন বহু দূর থেকে বেজে ওঠে পুরোনো আমেজে, নিজেকে ফিরে পাই এমন করে বারবার, গানের ভুবনেও ফিরে আসে স্মৃতির মাধুর্য!
অনন্যা হক: কবি ও লেখিকা

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology